শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৬

|| সৌহার্দ্য ও পরোপকার ||

সামাজিক জীব হিসেবে সকল মানুষের ভেতর সৌহার্দ্য ও পরোপকারের মতো সদগুণের উপস্থিতি একান্ত অপরিহার্য। অন্যথায়, সামাজিক শান্তি ও সংহতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। কিন্তু, এই পরোপকারের গুণটি এ সমাজে যেন ক্রমশ দুর্লভ থেকে দুর্লভতর হয়ে উঠছে। স্বার্থপরতা ও স্বার্থান্ধতায় মানুষ এখন পশুকেও হার মানাচ্ছে।

ইসলাম তাই মানুষকে স্বার্থবুদ্ধি ও আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে মুক্ত করতে ক্ষমা এবং উদারতার শিক্ষা দিয়েছে। উৎসাহিত করেছে লেন-দেনে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষমা, নম্রতা ও উদারতা দেখাতে। যে এসব গুণে উদ্ভাসিত হবে, তার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে জান্নাত- যার ব্যাপ্তি আসমান-যমীনের চেয়েও বেশি। আর তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা।

আল্লাহ আমাদেরকে স্বার্থবুদ্ধি ও আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে মুক্ত হয়ে নম্রতা, উদারতা, সৌহার্দ্য ও পরোপকারের গুণ অর্জন করে নিজেকে উদ্ভাসিত করার এবং সে অনুযায়ী তা আ'মল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

সাঈদুর রহমান
প্রথম প্রকাশ: ফেসবুক (২২ মার্চ ২০১২)
(সামান্য পরিবর্তিত)

সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬

❂|| একটি নজিরবিহীন ঘটনা ||❂


স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এ যাবৎকাল পর্যন্ত দল, মত, আদর্শগত দিক দিয়ে আলেম-ওলামাদের নিরবিচ্ছিন্ন ঐকমত্য পরিলক্ষিত হয়নি।

আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) সম্পর্কে কটুক্তিকারীদের ক্রমাগত উস্কানি, সীমাহীন ঔদ্ধত্যের প্রতিবাদে আলেম-ওলামা, পীর-আউলিয়া এবং সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা আজ একই প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়িয়েছে। আল-হামদুলিল্লাহ।

মানবতার মুক্তির দূত, মহামানব, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “আমার উম্মতগণ কোন গোমরাহীতে একমত হবে না।” (আহমদঃ২৫৯৬৬; তাবরানীঃ২১৭১)

বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, কোন অপ্রীতিকর সম্প্রদায়িকতামুক্ত, অরাজনৈতিক ও নির্মোহ অথচ গতিময়, প্রাণময় ও আবেগময় ভাষা ও উপস্থাপনায় তৌহিদী জনতার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবেন, যা তাদেরকে উজ্জীবিত চেতনায় শুধু সামনে চলার পথ-নির্দেশ করবে, মুক্তির পথের ঠিকানা ও সন্ধান বাৎলে দিবে, এমন ব্যক্তির আজ ভীষণ প্রয়োজন।

সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ও রাহনুমার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান তৌহিদী জনতা যাঁদের তেজোদ্দীপ্ত আহ্বানে আজ ঐক্যবদ্ধ, আল্লাহ্ রব্বুল আলামিন তাঁদেরকে নেক হায়াত দান করুন, ঐকমত্য-ঐক্যবদ্ধ রাখুন এবংজাহেলিয়াততথা বাতিলএর বিরুদ্ধে দৃঢ় থাকার শক্তি, সাহস, সামর্থ্য, যোগ্যতা, সক্ষমতা, উৎকর্ষতা দান করুন। আমিন। সুম্মা আমিন।

সাঈদুর রহমান
প্রথম প্রকাশ: ফেসবুক (৬ এপ্রিল ২০১৩)
(সামান্য পরিবর্তিত)

সুস্থ মানুষ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

পৃথিবীর বেশির ভাগমানুষ কোন না কোন ধর্মের অনুসারী, নীত-নৈতিকতা ও সুস্থ চিন্তা-ধারার অধিকারী। কিছু সংখ্যক মানুষ আছে যারা কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না। তাদের মধ্যেও আবার অল্প কিছু মানুষ আছে- যারা নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত, মানবতা ও সুস্থ চিন্তা-ধারার পরিপন্থী। বেশির ভাগসুস্থ মানুষের মাঝে এ অল্প সংখ্যক অসুস্থ মানুষগুলোর তাদের অসুস্থতার ধরণ অনুযায়ী সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কিন্তু বেশির ভাগমানুষেরই। এটা বেশির ভাগমানুষের কল্যাণের জন্যেই।

মানব দেহে হঠাৎ করেই বড় কোন রোগ দেখা দেয় না। বরং ছোট ছোট সমস্যা (যা প্রথমে রোগ হিসেবে ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না) দেহে বাসা বেঁধে, অযত্নে, অবহলায়, সুচিকিৎসার অভাবে তা ক্রমশঃ দূরারোগ্য রোগে পরিণত হয়।

আজকের এ পরিস্থিতি, পরিণতির জন্য বেশির ভাগসুস্থ মানুষগুলোই দায়ী। কারণ, সময়মত এই বেশির ভাগসুস্থ মানুষগুলোই অসুস্থ মানুষগুলোর চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়নি। অসুস্থতার তীব্রতা এতই বেড়ে গিয়েছে যে, প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে, প্রলাপ বকতে বকতে নিজেরাতো অস্থির হয়েছেই, তাদের গোঙানো, চেঁচামেচিতে সুস্থ মানুষগুলোর এখন ত্রাহি অবস্থা। তাই এ মুহূর্তে প্রয়োজন সর্বোচ্চ পর্যায়ের এন্টিবায়োটিকব্যবহারের। এতে যেমন রোগী ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তেমনি ঝুঁকিও রয়েছে। কিন্তু বিকল্প কিছু করার নেই।

আল্লাহ আমাদেরকে সুস্থ রাখুন, সুস্থ মানুষগুলোকে ছোঁয়াছে অসুস্থতা থেকে হেফাজত করুন এবং অসুস্থ মানুষগুলোকে সুস্থ করে দিন, তাদের ব্যাপারে উত্তম ফায়সালা করে দিন। আমিন। সুম্মা আমিন।

সাঈদুর রহমান
প্রথম প্রকাশ: ফেসবুক (৫ এপ্রিল ২০১৩)

রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬

আল্লাহর ভালবাসা ও অনুগ্রহ

মহান আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণতোমাদের মধ্যে যে স্বীয় দ্বীন থেকে ফিরে যাবেতবে অচিরেই আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটাবেনযাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহতিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই তা দান করেন। এবং আল্লাহ প্রাচুর্যময়মহাজ্ঞানী।” (সূরাঃ মায়িদাআয়াতঃ ৫৪)

হে আল্লাহ, সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করো না। আমিন।

আল্লাহ আমাদেরকে সেই সম্প্রদায় এর অন্তর্ভুক্ত করুন যে সম্প্রদায়কে তিনি ভালবাসবেন এবং তাঁর অনুগ্রহ দান করবেন। আমিন। সুম্মা আমিন।
সাঈদুর রহমান
প্রথম প্রকাশ: ফেসবুক (১২ মার্চ ২০১২)

শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬

বসন্ত!

বসন্ত! বসন্তের আগমনে হৃদয়ে জাগে শিহরণ।
কিন্তু কোথায় সে বসন্ত?
একটি গানের কথা মনে পড়ে যায়-
কত বসন্ত, কত শ্রাবণ,
কত যে ... এসে যায় চলে,
আসে না সে ফিরে ...

আমার জীবনেও বুঝি আর বসন্ত আসবে না!

চারিদিকে শুনি তারুণ্যের জয়ধ্বনি। কবি নজরুলের কণ্ঠেও শুনেছি তারুণ্যের জয় গান। পৃথিবীর ইতিহাসেও তারুণ্যের জয় গান। নিজেকে তাই তরুণদের একজন ভাবতে ভাল লাগে। তবে, নিজেকে একজন বৃদ্ধ মনে হয় তখন, যখন মনে পড়ে যায় হাসান (রাঃ), হুসাইন (রাঃ), আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ), আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ), আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়র (রাঃ) দের বিজয় গাঁথা ইতিহাস । সে তো গেল না হয় নক্ষত্র যুগ”-এর কথা। কিন্তু তারেক ইবনে যিয়াদ, মুহাম্মদ ইবনে কাসিম, সুলতান সালাউদ্দিন, টিপু সুলতান এ নামগুলোর পাশেও তো আর যুক্ত হচ্ছে না নতুন কোন নাম।

তারুণ্যের সংখ্যাধিক্য। সে তো রাজা জর্জীর, রাজা দাহির-এর রাজ্যেও ছিল। আমাদেরও আছে। উঠে আসবে কি তাদের মাঝ থেকে একজন তারেক ইবনে যিয়াদ, মুহাম্মদ ইবনে কাসিম, সুলতান সালাউদ্দিন অথবা টিপু সুলতান?
সেই চির বসন্তের অপেক্ষায় .....।

সাঈদুর রহমান
প্রথম প্রকাশ: ফেসবুক (২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)
(কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত)

বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৬

আর রাহীকুল মাখতূম



‘আর রাহীকুল মাখতূম’ একটি সীরাত গ্রন্থ। আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহ.) আরবি ভাষায় এ গ্রন্থটি রচনা করেন, যা যুগের সেরা সিরাত গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এ গ্রন্থটি মূলত সিরাত এর ওপর রচিত অতীতের শত শত গ্রন্থের মৌলিক ও নির্ভরযোগ্য উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এক কথায় সিরাত সংক্রান্ত বিশাল সংগ্রহশালার একটি নির্যাস গ্রন্থ।
বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুলকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন। যিনি স্বয়ং তাঁর ফেরেশতাদের নিয়ে রাসুলের নামে দরুদ ও সালাম পাঠান। তিনিই তাঁর প্রিয় রাসুলকে ভালোবাসার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুলের আনুগত্যের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবাসার প্রমাণ এবং মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি বলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনুল কারিমে ঘোষণা দিয়েছেন।

রাসুলের সুন্নাহ হচ্ছে এক জীবন্ত ও সর্বোত্তম আদর্শ। কেয়ামত পর্যন্ত এ আদর্শের আবেদন, এ আদর্শের বর্ণনা এবং এ আদর্শ সম্পর্কে গ্রন্থ রচনা অব্যাহত থাকবে। কারণ, রাসুলের আদর্শের মাঝে রয়েছে মানুষের জন্য হেদায়েতের আলো। আল্লাহর রাসুলের কাজ ও চরিত্রই হচ্ছে তাঁর সিরাত। কোরআনের প্রতিচ্ছবি, সব মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ, সমগ্র মাখলুকের ভালোবাসা পাওয়ার উপযুক্ত এমন মহান ব্যক্তিত্বের প্রতি যুগে যুগে মুসলিমরা ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় হিজরী ১৩৯৬ সনে রাবেতায়ে আ’লমে ইসলামী সীরাতুন্নবী (সা) সম্পর্কিত গ্রন্থ রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বিশ্বব্যাপী এ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন দেশের বহু লেখক আগ্রহসহ অংশগ্রহণ করেন। ১১৮২টি পাণ্ডুলিপির মধ্যে ‘আর রাহীকুল মাখতূম’ গ্রন্থটিকে প্রথম পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে এক বিরল সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। আর এ দুর্লভ সম্মানের কৃতিত্ব, অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তার সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র তাঁরই প্রাপ্য যাঁর আদর্শকে কেন্দ্র করে এ গ্রন্থ রচিত হয়েছে।
সাহিত্যকর্মের রূপ-রস, সৌন্দর্য, মাধুর্য, শোভনতা, সাবলীল ও প্রাঞ্জলতার মধ্যেই নিহিত রয়েছে উক্ত সাহিত্যকর্মের প্রকৃত মূল্য। ‘আর রাহীকুল মাখতূম’ গ্রন্থের সুন্দর ও সাবলীল প্রকাশভঙ্গি এবং লেখকের মোহনীয় শক্তি জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বে কোটি কোটি মানুষের অন্তরে। পাঠকের কথা বিবেচনায় রেখে লেখক গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে গ্রন্থের কলেবর অস্বাভাবিক দীর্ঘ করেননি, আবার খুব বেশি সংক্ষিপ্তও করেননি। অথচ এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সিরাত গ্রন্থও বটে।
গ্রন্থ রচনায় লেখক ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর ধারাবাহিক বর্ণনা করেছেন এবং সেগুলোর বর্ণনায় তিনি বিভিন্ন অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়ে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিন্যস্ত করেছেন। যেসব ঘটনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন গ্রন্থে মতপার্থক্য রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে লেখক সবকিছু পর্যালোচনা করে যেটি সঠিক মনে করেছেন সেটির উল্লেখ করেছেন। যেসব ক্ষেত্রে ভিন্ন মত পোষণকারীদের তথ্য লেখকের কাছে সঠিক মনে হয়নি সেসব ক্ষেত্রে তিনি যুক্তি-প্রমাণের ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। আবার, তথ্যের উৎস হিসেবে গ্রন্থটিতে লেখক অসংখ্য গ্রন্থের নাম ও পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করেছেন।
গ্রন্থের শুরুতে লেখক রাসুল (সা.) এর আবির্ভাবের আগে পৃথিবীতে বিরাজমান বিভিন্ন অবস্থা ও পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন। আরবের ভৌগোলিক পরিচয়, তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন জাতির অবস্থান, আরবের নেতৃত্ব ও শাসন ব্যবস্থা, আরবদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মতবাদ, জাহেলি সমাজের চারিত্রিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে লেখক এ পৃথিবীতে রাসুল (সা.) এর আবির্ভাবের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অতঃপর রাসুল (সা.) এর পবিত্র ও সংগ্রামী জীবনের প্রতিচ্ছবির এক অনবদ্য উপস্থাপনা গ্রন্থটিকে করেছে প্রাণবন্ত।
রাসুল (সা.) এর দাওয়াতের বিভিন্ন কৌশল ও পর্যায় বর্ণনা হতে শুরু করে, বদর, ওহুদসহ বিভিন্ন যুদ্ধ, মক্কা বিজয়, বিদায় হজ, রাসুল (সা.) এর ওফাত পর্যন্ত সব ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনার পর রাসুল (সা.) এর পরিবারের পরিচিতি, রাসুল (সা.) এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও শারীরিক সৌন্দর্য বর্ণনার এক ব্যতিক্রমী উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে লেখক গ্রন্থটির পরিসমাপ্তি টানেন।
‘আর রাহীকুল মাখতূম’ গ্রন্থটির বিশ্বব্যাপী আলোচিত ও প্রশংসিত হওয়া এবং অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তার কথা বিবেচনা করে খাদিজা আখতার রেজায়ী বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য গ্রন্থটির সর্বপ্রথম বাংলা অনুবাদ করেছেন। অনুবাদ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে আল কোরআন একাডেমি। পরবর্তীতে তাওহীদ পাবলিকেশন্স, পিস পাবলিকেশনসহ অনেকেই গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছে।

সাঈদুর রহমান
প্রথম প্রকাশ: সভ্যতা ও সংস্কৃতি, আলোকিত বাংলাদেশ
(২৪ অক্টোবর ২০১৬)

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া

প্রখ্যাত মুফাসসির ও ইতিহাসবিদ আল্লামা আবুল ফিদা হাফিজ ইবনে কাসির আদ দামেশ্কী (রহ.) কর্তৃক আরবি ভাষায় রচিত ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ একটি সুবিশাল ইতিহাস গ্রন্থ, যা নির্ভরযোগ্য তথ্যে সমৃদ্ধ এবং অত্যন্ত জনপ্রিয়।
আল্লাহ তায়ালার বিশাল সৃষ্টিজগতের সৃষ্টিতত্ত্ব ও রহস্য, মানব সৃষ্টিতত্ত্ব তথা মানব ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা, নবী-রাসুলদের আগমন ও তাঁদের কর্মব্যস্ত জীবনের ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে এ গ্রন্থে।
‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ একটি ইতিহাস গ্রন্থ হওয়া সত্ত্বেও এ গ্রন্থে ব্যবহৃত উচ্চস্তরের ভাষা ও এর সাহিত্যিক মানের কারণে বিখ্যাত আরবি সাহিত্যিকদের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) তার এ গ্রন্থের প্রতিটি আলোচনা কোরআন, হাদিস, সাহাবা ও বিভিন্ন মনীষীর উক্তি দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন। এ ক্ষেত্রে লেখক কোনো তথ্য বা বর্ণনাতে অতিরঞ্জন, অতিকথন বা নিজের পক্ষ থেকে কোনো পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন পরিহার করেছেন।
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) তার এ গ্রন্থকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথম অংশে রয়েছে সৃষ্টিজগতের তত্ত্ব-রহস্য তথা আরশ-কুরসি, আসমান-জমিন ও এগুলোর মধ্যস্থিত যা কিছু আছে তা সৃষ্টি এবং আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে সেগুলো সৃষ্টির ইতিহাস। অর্থাৎ আরশ-কুরসি, আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী সব কিছু তথা ফেরেশতা, জিন, শয়তান, হজরত আদম (আ.) এর সৃষ্টি, নবী-রাসুলদের ধারাবাহিক আলোচনা, বনি ইসরাইলিদের বর্ণনা, আইয়ামে জাহেলিয়াতের ঘটনা এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনচরিত ও নবুয়ত লাভ পর্যন্ত সময়ের আলোচনা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় অংশে রয়েছে রাসুল (সা.) এর ওফাতের পর থেকে ৭৬৮ হিজরি সাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য খলিফা, রাজা-বাদশাহদের উত্থান-পতনের ঘটনা, মনীষীদের বর্ণনা, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ। আর তৃতীয় অংশে লেখক অন্তর্ভুক্ত করেছেন মুসলিম উম্মাহর অশান্তি ও বিপর্যয়ের কারণ, ভবিষ্যতে অনুষ্ঠিতব্য মানবজাতির মধ্যে সংঘাত, অশান্তি, বিপর্যয়, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ফেৎনা-ফ্যাসাদ, কেয়ামতের আলামত, পুনরুত্থান, হাশর-নশর, কেয়ামত দিবসের ভয়াবহ অবস্থা, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ।
ইতিহাস গ্রন্থ রচনায় লেখক তার পূর্বে রচিত গ্রন্থগুলোর রীতি অনুসরণ করেছেন। ঘটনাগুলোর বর্ণনায় তিনি ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন এবং সেগুলোর বর্ণনায় তিনি বিভিন্ন শিরোনাম দিয়েছেন। প্রথমে তিনি বছরের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো এবং পরবর্তীতে ওই বছর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যারা ইন্তেকাল করেছেন তাদের জীবনী আলোচনা করেছেন। কখনও কখনও তিনি তার স্বরচিত কবিতা সন্নিবেশন করেছেন। আবার তথ্য-প্রমাণে তিনি প্রাসঙ্গিক কোরআনের আয়াত ও হাদিস উপস্থাপন করেছেন। ইসলামের ইতিহাস চর্চাকারীদের কাছে তাই এ বিখ্যাত গ্রন্থটি মৌলিক ও নির্ভুল ইতিহাস গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
এ গ্রন্থটি হিজরি ১৩৪৮ সনে কুর্দিস্তান আল আলামিয়া প্রেসে প্রথম মুদ্রিত হয়। দ্বিতীয়বার মুদ্রিত হয়েছিল কায়রোর আসসা’আদাহ্ প্রেসে ১৩৫১ হিজরিতে। পরে গ্রন্থটি পরিমার্জিতরূপে রিয়াদে ছাপা হয় হিজরি ১৩৮৮ সনে। এছাড়াও গ্রন্থটি বহুবার বহু ভাষায় মুদ্রিত হয়েছে। গ্রন্থটির গুরুত্ব বিবেচনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন ‘বাংলা’ ভাষায় এর অনুবাদ প্রকাশ করেছে। ১৪ খণ্ডের ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থটির বাংলা নামকরণ করা হয়েছে ‘ইসলামের ইতিহাস : আদি-অন্ত’।

সাঈদুর রহমান
প্রথম প্রকাশ: স্মৃতির আঙ্গিনায় ২০১৬, আইএমএল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (মে ২০১৬ইং)
দ্বিতীয় প্রকাশ: সভ্যতা ও সংস্কৃতি, আলোকিত বাংলাদেশ
(১৭ অক্টোবর ২০১৬)